রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে বিদায় জানাল


 

ডিএনএন ডেক্স: বর্ণাঢ্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে বিদায় জানাল বঙ্গভবন। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে আর কোনো রাষ্ট্রপতির জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রাচারে এমন বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি। কারণ, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আগে এমন অনুষ্ঠান করার মতো মসৃণ পরিবেশও ছিল না। আবদুল হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।


বিদায়ি অনুষ্ঠানের আগে আবদুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতিবিদদেরকে দেশের মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করা উচিত। তাহলেই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে ভালোবেসেই তিনি সারা জীবন রাজনীতি করে গেছেন। মানুষের ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন।


নিজেকে উপমহাদেশের রেকর্ড সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রপতি উলে­খ করে তিনি জানান, টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর মানুষের ভালোবাসায় তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত এবং চলতি দায়িত্ব হিসাবে আরও ৪১ দিন তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন।


আবদুল হামিদ জানান, দেশের মানুষ আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন। মানুষের সেই সম্মান তিনি অটুট রাখতে চান। তিনি অবসর জীবন বই পড়ে এবং লেখালেখি করে কাটাবেন। তবে নতুন করে আর কোনো রাজনীতিতে জড়াবেন না।


এদিকে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানের পর আবদুল হামিদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিকুঞ্জে নিজ বাসভবনে চলে যান। এখন থেকে সেখানেই থাকবেন তিনি। আবদুল হামিদকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত¡াবধানে একটি মোটর শোভাযাত্রায় তার নিকুঞ্জের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।


এর আগে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি চৌকশ দল বিদায়ি রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। বিদায় অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর একটি ব্যান্ড দল অংশ নেয়। দুই দলে বিভক্ত বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা গাড়ির দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বঙ্গভবনের প্রধান ফটক থেকে বাইরের গেটের ফোয়ারা পর্যন্ত খোলা জিপে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে আবদুল হামিদকে বিদায় জানান তারা। সেখান থেকে বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে তাকে শেষবারের মতো মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।


বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল­ুর রহমান তখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ওই বছরের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। এপ্রিলে তিনি ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন।


আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে জš§গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষদিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।


প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ-সদস্য আবদুল হামিদ এর আগে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সাতবার সংসদ-সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। সোমবার দুপুরের পর থেকে আবদুল হামিদ ও তার পরিবার তাদের নাগরিক জীবনে ফিরে গেলেন।

মন্তব্যসমূহ