টেকনাফ প্রতিনিধি।
কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। খুন, মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখলসহ সব ধরনের অপরাধে তাদের চলছে একচ্ছত্র রাজত্ব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের অনেকে গ্রেপ্তার হলেও লাগাম টানা যাচ্ছে না। এক গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার হলে, সেটির দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে অন্য কেউ। সন্ধ্যা নামলেই নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা নেমে পড়ছে সশস্ত্র মহড়ায়। প্রাণ ভয়ে তাদের বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না সাধারণ রোহিঙ্গারা। আবার গহিন জঙ্গলে আস্তানা গড়ায় তাদের খোঁজ পায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১২টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের সদস্য সংখ্যা কয়েক হাজার।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় রাজত্ব করা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অন্যতম আলম গ্রুপ। টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি-শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল সবই চলছে আলম গ্রুপের ইশারায়। কুখ্যাত সালমান শাহ গ্রুপ ও জকি গ্রুপের সদস্যদের এক ছাতার নিচে এনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন আলম। অথচ একসময় জকি গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন তিনি। কাজ করেছেন সালমান শাহ গ্রুপের সঙ্গেও। বর্তমানে এই আলম গ্রুপই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্ক। এছাড়াও কুখ্যাত কয়েকটি গ্রুপ দুর্বল হয়ে পড়ার সুযোগে রুবেল গ্রুপ ও ইসলাম গ্রুপের মতো ডাকাত দল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিও (আরসা)।
সূত্র বলছে, নতুনভাবে মাথাচাড়া দেয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও আগের মতোই মদদ দিচ্ছে মিয়ানমারের একাধিক বাহিনী। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অস্ত্র-মাদক আনতেও সহযোগিতা করছে তারা।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের অর্ধশতাধিক মাফিয়ার হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। রোহিঙ্গাদের ৩৩টি ক্যাম্পে এদের কথাই শেষ কথা। এদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক একে-৪৭সহ ভারী চাইনিজ অস্ত্র। এরা প্রত্যেকেই অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত। নিজেরাও তাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর এ প্রশিক্ষণ চলে পাহাড়ের গহিনে।
ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে এপিবিএন-১৬ (কক্সবাজার) এর সহঅধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. জামাল পাশা ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সেজন্য আমরা সবসময় নজরদারি অব্যাহত রাখি। কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্ন অপরাধ ঘটানোর পায়তারা করে।
আমরা কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেই। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেও বেশ কয়েকজন কুখ্যাত ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে স্বক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ক্যাম্পের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। অপহরণ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। অন্য অপরাধগুলোও শূন্যের কোঠায় আনতে টহলসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।