শক্তি বাড়াতে অর্থ আয়ের উৎস করেছে ইয়াবা, আইস সহ অবৈধ মাদকের ব্যবসাকে|ডিএনএন


বিশেষ প্রতিনিধিঃ

মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের সুযোগে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে অর্থ আয়ের উৎস করেছে ইয়াবা, আইস সহ অবৈধ মাদকের ব্যবসাকে।

নাফ নদী পেড়িয়ে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় ওপারের রাখাইন থেকে প্রবেশ করছে মাদকের চালান, অল্প দামে বেশি সরবরাহ পাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এপারের শীর্ষ মাদক কারবারিরা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে মাদক বহনকারী গ্রেপ্তার হলেও অধরা মূল হোতা এবং অন্তরালের পৃষ্ঠপোষকরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে প্রকাশ পেয়েছে মাদক প্রবাহ বাড়তে থাকার শংকা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে 'বাংলাদেশে মাদকের আগ্রাসন রোধকল্পে গঠিত স্ট্রাটেজিক কমিটির তৃতীয় সভায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

সভায় তিনি জানান, রোহিঙ্গাসহ দেশের কারবারিদের কাছে ইয়াবা ও আইসের মত দামী মাদক কম দামে বিক্রি করে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা নিজেদের খরচ চালাচ্ছে ও অস্ত্র কিনছে।"


গত ২৭ এপ্রিল, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কারবারিদের একটি চক্র মিয়ানমারের এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী থেকে ইয্যাবার একটি বড় চালান ক্রয় করে।

দুইদিন পর টেকনাফ থেকে নদীপথ ব্যবহার করে চট্টগ্রামে পাচারের সময় এই চালানের সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় চকরিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় শাহজাহান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি চালানটি গন্তব্যে পেঁৗহাতে সহযোগিতায় ছিলেন।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের বহলতলী এলাকায় মহেশখালী চ্যানেলে (নদীতে) অভিযান পরিচালনা করে একটি নৌধান থেকে ইয়াবাভর্তি প্লাস্টিকের পাঁচটি ড্রাম জব্দ করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা মাদক কারবারিদের সর্বশেষ তালিকায় রয়েছে কক্সবাজার জেলার ১ হাজার ১৫১ জনের নাম। শীর্ষ ৭৩ জন ইয়াবা কারবারির মধ্যে ৬৫ জন সহ সর্বোচ্চ ৬১২ জনই টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা।

মাদক ব্যবসার ভয়াবহ বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে এই তালিকা হালনাগাদ করার কার্যক্রম চলছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরে (২০২৩) ৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ২১৯টি ইয়াবা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বলছে, ২০২২ সালে ৪ কোটি ৫৮ লাখ এবং ২০২১ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫টি ইয়াবা জব্দ হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। মাদকের প্রবাহ রোধে বেশ কিছু পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজগুলো করা হবে। যেকোনো মূল্যে মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে হবে।

যেকোনো মূল্যে মিয়ানমার থেকে মাদকের সরবরাহ হ্রাস করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে পুলিশ জানিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বন্ধ না হবে, তত দিন পর্যন্ত সীমান্তে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে কড়া নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি শীর্ষ মাদক কারবারিদের গতিবিধি অনুসরণ করতে হবে।

জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (ইউএনওডিসি) এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে যত মাদক ঢুকছে তার মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে।

মন্তব্যসমূহ