Type Here to Get Search Results !

জাতীয়

6/col-left/জাতীয়

টেকনাফে ডাকাত চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫



মুহাম্মদ কিফায়তুল্লাহ,টেকনাফ কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার টেকনাফ থানাধীন রঙ্গীখালি এলাকার দূর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরীর কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে মূলহোতা ফয়সাল’সহ ডাকাত চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫; বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার

টেকনাফ থানা টেকনাফ থেকে শুরু করে হ্নীলা এই অঞ্চলের যে গহীন পাহাড় এলাকা বিদ্যমান এখানে একাধিক ডাকাত চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। সকল ডাকাত চক্র প্রতিনিয়ত এলাকাবাসী এবং অন্যান্য এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানিসহ খুন, অপহরণ ও ধর্ষণ জাতীয় অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। র‌্যাব-১৫ শুরু থেকেই এ সকল ডাকাত দলের গতিবিধি এবং অবস্থান নজরদারিতে রেখেছে এবং এ সকল ডাকাত চক্রকে ধরার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিধানিক দল কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালি এলাকার গহীন পাহাড়ে অবস্থানরত একটি ডাকাত চক্র ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করে এবং ডাকাত দলের আস্তানায় অভিযান পরিচালনার সময় একটি অস্ত্র তৈরীর কারখানা আবিষ্কার করে। র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি টের পেলে ডাকাত দলের সদস্যরা র‌্যাবের আভিযানিক দলের উপরে গুলি বর্ষন করে এবং এদিক-ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় পলায়নকালে ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূলহোতা ফয়সালকে র‌্যাবের আভিযানিক দল গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ফয়সাল, ডাকাত দল চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল টেকনাফের রঙ্গীখালির বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বদি, কবির, সৈয়দ হোসেন, দেলোয়ার এবং মিজানুর’কে গ্রেফতার করা হয়। বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে ডাকাত দলের তৈরীকৃত অস্ত্রের কারখানা হতে ০২টি একনলা বড় বন্দুক, ০৪টি এলজি, ০১টি অর্ধনির্মিত এলজি, ০৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, ০১টি ড্রিল মেশিন, ০১টি আগুন জ্বালানো মেশিন, ০২টি লেদ মেশিন, ০২টি বাটাল, ০১টি শান দেয়ার রেত, ০২টি লোহার পাইপ, ০২টি প্লাস, ০১টি কুপি বাতি এবং ০৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত চক্রটির বিস্তারিত পরিচয়, ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল (৪০), পিতা-গুরা মিয়া, সাং-রঙ্গীখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার।মোঃ বদি আলম ওরফে বদাইয়া (৩৫), পিতা-নজির আহম্মদ সাং-পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার। মোঃ কবির আহাম্মদ (৪৩), পিতা-জানে আলম, সাং-দক্ষিণ আলীখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার।মোঃ সৈয়দ হোসেন (৩২), পিতা-বাছা মিয়া, সাং-পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার।মোঃ দেলোয়ার হোসন (৩৫), পিতা-মৃত বনি আমিন, সাং-পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার।মোঃ মিজানুর রহমান (২৬), পিতা-জাহিদ হোসেন, সাং-উলুছামারি কুনারপাড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার।
 
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রটি টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যা’সহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও দূর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ার সুবাদে সেখানে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরীর কারখানা। গ্রেফতারকৃত ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের নিকট অস্ত্র সরবরাহ’সহ নিজেদের তৈরীকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরীকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত। গ্রেফতারকৃত ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে সশস্ত্র হামলার তথ্য পাওয়া যায়। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্ধি করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে অপরাধীরা জানায়।

গ্রেফতারকৃত ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল একজন কুখ্যাত অস্ত্রাধারী ডাকাত দলের মূলহোতা। সে ফয়সাল বাহিনী নামে একটি ডাকাত দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। তার নেতৃত্বে রয়েছে টেকনাফের রঙ্গীখালি এলাকার দুর্গম পাহাড় গড়ে উঠে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানা। তার দলের সহযোগীদের নিয়ে সেখান থেকে টেকনাফ, উখিয়া ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে খুন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ডাকাতি ও দুস্যতা, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় ০৩টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মোঃ বদি আলম ওরফে বদাইয়া এর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, মোঃ কবির আহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ০২টি, মোঃ সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ০৩টি, মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ০৩টি এবং মোঃ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে ০১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.