Type Here to Get Search Results !

জাতীয়

6/col-left/জাতীয়

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বিরোধী যুদ্ধ থেমে নেই, খাদ্য ও ভোজ্যপণ্য পাচার


মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বিরোধী যুদ্ধ, থেমে নেই খাদ্য ও ভোজ্যপণ্য পাচার
পাচারকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা, নিচ্ছে কমিশন 

জড়িত মুদি ও তৈল ব্যবসায়ীরা, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

পাচারকারীদের হাতে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র

আসন্ন রমজানে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ করছে পন্য 

প্রশাসন থেকে ছাড় পাচ্ছে পাচারকারীর বাহন

টেকনাফ সীমান্তের ৩০পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে যাচ্ছে পন্য


নিজস্ব প্রতিবেদক:

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বিরোধী যুদ্ধ চলছে। ফলে বাংলাদেশ সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারী করা হয়েছে। যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায় এবং তিন স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান গ্রহণ করেছে।এরপরেও থেমে নেই ইয়াবা পাচার, বাংলাদেশী পন্য পাচারসহ ইত্যাদি। এতে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কি করে বাংলাদেশী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও মিয়ানমারে মাদক এপার-ওপার আসা যাওয়া করে?


কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী ও সমুদ্রপথের অন্ততঃ ৩০টি বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চোরাকারিরা এসব পন্য পাচার করে আসছে। বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসছে ভয়ংকর মাদক আইস ও ইয়াবা। উপকূলীয় এলাকার ডজনের বেশী পয়েন্ট দিয়ে রাত নামলে পাচারের হিড়িক পড়ে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা। এইসব পয়েন্টের মধ্যে বেপরোয়া নৌ-ঘাটের সিন্ডিকেট। মেরিন ড্রাইভ জেলে ঘাট দিয়ে রাত নামলেই মিয়ানমারে খাদ্যপণ্য ও অকটেন পাচারের হিড়িক পড়ে যায়। এতে স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। ফলে আসন্ন রমজানে বাজারে খাদ্যপণ্যের সংকট ও দাম বৃদ্ধির আশংকা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কতিপয় অসাধু চক্রের সদস্যের পাচারকারীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে। পৌরসভার তিনটি পয়েন্টে এই অসাধুতার সাথে চুক্তি করেই পাচার হয় বলে দাবী স্থানীয়দের। কোন কোন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে খাদ্যপন্য, অকটেন জব্দ করা হলেও অনেকক্ষেত্রে পাচারে জড়িত যানবাহন মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার জব্দ খাদ্য ও অকটেনের একটা অংশ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা।এতে করে একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সাথে খাদ্যদ্রব্য, অকটেন, ডিজেল ইত্যাদি দেশ হতে অন্য দেশে পাচার হওয়ার কারণে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এইসব সিন্ডিকেটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের নামও বিভিন্নভাবে উঠে আসছে। আর অকটেন পাচারে সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছেন সাবরাং ও টেকনাফের বেশ কয়েকটি পেট্রোলপাম্পের মালিক। তদারকির অভাবে নিয়ম না মেনে তারা পাচারকারীদের কাছে অকটেন বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।


টেকনাফ সীমান্তের ৩০পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে যাচ্ছে পন্য 

টেকনাফ উপজেলার পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের রবইতলী, কেরুণতলী,নাইট্যংপাড়া, নাফ নদীর জালিয়াপাড়া,কায়ুকখালী খাল, ট্রানজিট ঘাট, দেড় নম্বর স্লুইস,নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, রাজারছড়া, হাবিরছড়া, মিঠাপানিরছড়া, লম্বরী, তুলাতুলী, মহেষখালীয়াপাড়া, লেঙ্গুরবিল, সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডারডেইল, শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়া ঘাট, দক্ষিণ পাড়া, মিস্ত্রীপাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া, কচ্ছপিয়া, শামলাপুর, হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা, মোচনী, লেদা,ওয়াব্রাং, হোয়াইক্যং সীমান্তের খারাংখালী, নয়াবাজার, মিনাবাজার, ঝিমংখালী, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং ও হোয়াইক্যং ষ্টেশন দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হয়। 


চোরকারীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র 

চোরকারবারীরা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মুদির দোকান ও তৈলের পাম্প হইতে নোহা, মাইক্রো, সিএনজি ও অটোরিক্সা যোগে খাদ্যপন্য ও মালামাল বহন করিয়ে অবৈধ অস্ত্র পাহারায় তাদের গন্তব্য নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাদের নিজস্ব ট্রলারযোগে রাতের আধাঁরে মিয়ানমারে পাচার করে থাকে।  


পাচারকারীদের ব্যবহৃত বাহন ছাড় পাওয়ার অভিযোগ

এদিকে চোরাকারবারীরা প্রতিনিয়ত পাচারের বাহন মিনিট্রাক, পিকআপ, জীপ, মাইক্রো, সিএনজি ও ইজিবাইক, নৌকাসহ পাচারের খাদ্যও ভোজ্যপন্য আটক করলেও  মালামালগুলো জব্দপূর্বক বাহনটি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ আছেএবং পরবর্তীতে আটক হলেও কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাই চোরকারবারিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে পন্য পাচারে উৎসাহ হচ্ছে। 


জড়িত চোরকারবারী সিন্ডিকেট 

টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের পুলিশ ফাঁড়ির সিএনজি ড্রাইভার জহির আহমদ প্রকাশ ঝামেলা জহির, নুর মোহাম্মদ প্রকাশ  মধু ও তার ছেলে মামুন, আরমান, দালাল শুক্কুর,মোঃ জিয়াবুল, মোঃ ফারুক, নুরুল আলম, মীর কাশেম, টেকনাফ বাহারছড়া  ইউনিয়নের বড়ডেইল এলাকার নোয়াখালী পাড়া ঘাটের আবদুল আলী, মাহবুব, কামরুল, কচ্ছপিয়া করাচি পাড়ার শাহাজান, মোঃ হোছন, কেফায়েত উল্লাহ, রেদুয়ান, গফুর মিয়া, টেকনাফ সাবরাংয়ের মুন্ডারডেইলের কুরাবুজ্জাপাড়ার মোহাম্মদ হাশিম, শহীদ উল্লাহ, আনোয়ার মিয়া, মোহাম্মদ হোছন(মাছন), নুরুল আমিন(লেড়াইয়া),রশিদ মিয়া মাঝি, নুর হোছন, রহিম উল্লাহ আব্দুল আমিন প্রকাশ লুলা মাঝি, মনজুর, ফতেলিয়া পাড়ার ইসলাম, টেকনাফ সদরের দরগাহ ছড়া এলাকার সাইফুল  ইসলাম, কালা বদা, লাল মোহাম্মদ ওরফে লাল্লু, বরইতলী কামাল, ফরিদ, মিজান, ফয়সাল, শামসুল আলম, রবি আলম, বক্কর প্রকাশ বাক্কাইন্না, ইউছুপ, আঙ্গুলী, ইউনুছ প্রকাশ হাজী, সিরাজ, পল্লান পাড়া নুরুল বশর, নুরুল কবির, টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার ইয়াছিন, নুরুল ইসলাম, লাল্লু, জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি প্রকাশ লাল মিয়া, ছৈয়দ আলম প্রকাশ লাল কিয়ারা, জালিয়াপাড়ার জাহাঙ্গীর, মাধ্যম জালিয়াপাড়ার জাহাঙ্গীর, লামারের বাজারের নেজাম সওঃ,উপরের বাজারের আবুল হোসন সওঃ, মসজিদ সংলগ্ন ইসমাইল, উপরের বাজার নুরু সওঃ, আরাফাত, আনোয়ার, নুরুল হক, আবু তাহের সওঃ, বাবুল সওঃ, আবু ছালেহ, মোঃ আলী, বাস স্টেশনের কাশেম, মনছুর , লিটন, হামিদ, অনুপম ষ্টোরের অনুপম, বদি আলম, পাল স্টোর, 


পাচারকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা, নিচ্ছে কমিশন

টেকনাফ সীমান্তের একাধিক জনপ্রতিনিধির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে বিশাল পাচারকারী সিন্ডিকেট। বিশেষ করে উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া ও সাবরাং এর জনপ্রতিনিধিরা এই পাচারকাজে সহযোগিতা করেছে এবং সহযোগিতার জন্য নির্ধারিত হারে নিচ্ছে কমিশন। কমিশন না দিলে ধরিয়ে দেওয়ার হচ্ছে প্রশাসনকে। এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন -জনপ্রতিনিধিরা সোচ্ছার হলে যে কোন মুহুর্তে পাচার রোধ করা যাবে। 


রমজানকে সামনে রেখে মিয়ারমারে যাচ্ছে পন্য 

আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে গুদামে পণ্য মজুদে মরিয়া। উদ্দেশ্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি “পাচার করা”। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে টেকনাফ পৌর বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য মওজুদ করার হিড়িক লক্ষ্য করা গেছে।পণ্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জন এবং প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে পাচার করার একমাত্র উদ্দেশ্যে বলে জানা গেছে। প্রতি বছর রমজান, ঈদ ও কোরবান আসার আগেই টেকনাফ পৌর লামার ও উপরের বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য পণ্য সামগ্র গোদামে মজুদ করার প্রতিযোগীতায় নেমে যায়। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে নিত্যপণ্য বোঝাই করে টেকনাফে আসে।


টেকনাফ কায়ুকখালীর উভয় পাশ্বে এবং ষ্টেশনে ও উপরের বাজারে অস্যংখ্যা অসাধু ব্যবসায়ীদের গোদাম গড়ে উঠেছে। যদি ও এর মধ্যে কিছু দোকান গোদাম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব গোদাম বা দোকানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দাবীর নাম নেই। সারা বছর এসব দোকান ও গোদাম বন্ধ থাকে। 


প্রশাসনের ভূমিকা

চোরাকারবারীরা প্রতিনিয়ত রাতের আধাঁরে মালামাল পাচার করে থাকে। নিদিষ্ট পাচারের গতিপথে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবস্থান নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান স্থানীয় ও চোরকারবারীরা জানিয়েছেন- প্রশাসনের হাতে আটক হলে দেন দরবার করে মোটা অংকের টাকা মালামাল ছাড় নেন। অন্যথায় মালামাল  গুলো তাদের নিজস্ব হেফাজতে রেখে গাড়ি জব্দ দেখিয়ে চোরকারবারীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর মুছলেখা প্রদান করিয়া গাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। 


এ ব্যাপারে টেকনাফ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মহিউদ্দিন  আহমদকে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও জবাব পাওয়া যায় নি।


কক্সবাজার র‌্যাব ব্যাটালিয়নের মিডিয়া সেলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সীমান্তের চোরকারবারী সিন্ডিকেট বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও পাচারকারী ভোজ্যতেল সয়াবিন, অকটেনসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য,অবৈধভাবে চোরাইপথে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে পাচার করছে।  এ বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.