অপহৃত ছাত্র শা’দ বিন আব্দুল্লাহকে ২২দিন পরে উদ্ধার|ডিএনএন

 


মুহাম্মদ কিফায়তুল্লাহ,টেকনাফ 

টেকনাফের হ্নীলায় নুরানী মাদ্রাসা হতে বাড়ি ফেরার পথে অপহৃত ছাত্র শা’দ বিন আব্দুল্লাহকে ২১দিন পর কুমিল্লা জেলা পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পর আটক ও উদ্ধার ভিকটিমকে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। 


৩১মার্চ (রবিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় টেকনাফ মডেল থানা হল মিলনায়তনে অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্র উদ্ধার পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) রাসেল পিপিএম। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ ওসমান গনি, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ। 


এতে জানানো হয়,গত ৯মার্চ দুপুর পৌনে ১২টারদিকে উপজেলার হ্নীলা ইউপির পূর্ব পানখালী আবু হুরায়রা (রাঃ) ইসলামিয়া নুরানী একাডেমীর ১ম শ্রেণীর ছাত্র ও কাতার প্রবাসী হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর পুত্র শা’দ বিন আব্দুল্লাহকে সিএনজিযোগে অজ্ঞাত নারী-পুরুষ অপহরণ করে নেওয়ার ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নং- ২০/১৩৭, তারিখ-১০/০৩/২০২৪ইং, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) এর ৭/৩০ রুজু করা হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে অপহৃত শিশুটি উদ্ধারের জন্য গুরুত্বের সাথে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ অভিযান শুরু করে


বিষয়টি তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে,শিশু অপহরণের মাস্টার মাইন্ড আনোয়ার সাদেকের পরিকল্পনায় বাদীনির ভাড়াটিয়া পুরাতন রোহিঙ্গা নাছের এবং মাজুমার নেতৃত্বে উম্মে সালমা, শাহীন এবং সিএনজি ড্রাইভার নাসির আলম মাদ্রাসা হতে বাসায় যাওয়ার পথে শিশু শা’দকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পুলিশ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সিএনজি ড্রাইভার নাছির এবং উম্মে সালমাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। 


তারা জানায়,এই অপহরণের সাথে আনোয়ার সাদেক, শাহীন, ত্বোহা, নাগু ডাকাত, মধু, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদ্যস্যরা চক্রের সক্রিয় সদস্য। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল হিসাবে মহেশখালী থানার কালারমার ছড়ার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে অপহৃত শিশু শা’দের মাকে বার বার মুঠোফোনে মাধ্যমে কথা বলে ২০লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে এবং না দিলে শিশুটি হত্যা করার হুমকি প্রদান করে। মুক্তিপন আদায়ে বিলম্ব হলে অপহৃত শিশুকে নির্মমভাবে মারধর করে শা’দের মা’সহ পরিবারের লোকজনদেরকে কান্নাকাটির শব্দ শুনাত। 


এদিকে সুত্রমতে,এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভিকটিমের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে অপহরণকারীরা বিভিন্ন কৌশলে দফায় দফায় ৮লাখ ২৫হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। 


এরই পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) রাসেল,টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ ওসমান গনি, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক,এসআই সুদর্শন,এসআই মাসুদ ফয়সাল ও সর্ঙ্গীয় অফিসার ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার ও কুমিল্লা জেলার লালমাই থানা পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর অপহৃত শিশু শা’দ বিন আব্দুল্লাহ,মুক্তিপণের ৪লাখ টাকা,অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজি ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।


ঘটনায় জড়িত ইতোমধ্যে অপহরণ চক্রের মাস্টার নয়াপাড়া মোচনী রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের ডি-ব্লকের নাগু ডাকাতের পুত্র আনোয়ার সাদেক (২১), মৃত আব্দুর শুক্কুরের ছেলে নাগু ডাকাত (৫৫), মোঃ আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা (২৪), মৃত আবদুল শুক্কুরের পুত্র মোহাম্মদ হাশেম (২৭), সৈয়দুল হকের স্ত্রী খাতিজাতুল কোবরা (৩৫), নাগু ডাকাতের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৪২), সাদের স্ত্রী হোসনে আরা (২০), নাগু ডাকাতের ছেলে রনি (১২), কক্সবাজারের ঝিলংজার দক্ষিণ হাজীর পাড়ার জাফর আলমের পুত্র মোঃ নাসির আলম (২৮),মহেশখালীর কালামার ছড়ার মাইজ ঘোনার মনছুর আলমের পুত্র ছালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া (৪৫), নয়াপাড়ার মৃত লাল মিয়ার পুত্র জহির আহমেদ (৬৫),শামসুল আলমের পুত্র হাসমুল করিম ত্বোহা (২০), সামিরাঘোনার ফরিদুল আলমের পুত্র মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ (১৯),মৃত রাহমত উল্লাহর পুত্র ফরিদুল আলম খান (৫২),সালামত উল্লাহ ওরফে সোনা মিয়ার পুত্র আমির হোসেন ও কালামর ছড়ার শামসুল আলমের পুত্র তৌহিদুল ইসলাম ত্বোহাসহ ১৭জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এই চক্রের অপরাপর সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলমান রয়েছে। 


আজ দুপুরে আটক এই চক্রের ৫জন নারী-পুরুষ সদস্যকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত তাদের জবানবন্দি গ্রহণের পর কারাগারে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। 


এদিকে রমজান মাস শুরু থেকে বেড়ে গেছে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা এই আতংকে রয়েছে। গত রমজানেও একইভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছিল। এই অপহরণের সাথে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কতিপয় অসাধু স্থানীয়রাও জড়িত রয়েছে। শীঘ্রই সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া অপহরণরোধে শীঘ্রই জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে মতবিনিময় করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সভা-সমাবেশ করা হবে।

মন্তব্যসমূহ